ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউএসএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

আসছে বিতর্কের মহারণ: হিলারি শিবিরে প্রস্তুতি, ট্রাম্প গা-ছাড়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
আসছে বিতর্কের মহারণ: হিলারি শিবিরে প্রস্তুতি, ট্রাম্প গা-ছাড়া

ডনাল্ড জে ট্রাম্পের ‘আর্ট অব দ্য ডিল’র অদৃশ্য লেখকদের কাছে এখন রীতিমতো ধর্না দিচ্ছেন হিলারি ক্লিনটনের উপদেষ্টারা। ট্রাম্পের সবচেয়ে নাজুক দিকগুলো খুঁজেপেতে বের করতে চান তারা, যাতে কৌশল সাজাতে পারেন।

আর এমন সব তিক্ষ্ণ যুক্তি খাড়া করতে পারেন যা উপস্থাপন মাত্রই ঘায়েল হয়ে যাবেন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের রিপাবলিকান প্রার্থী  ধনকুবের ডনাল্ড ট্রাম্প।

হাতে আর মাস খানেক সময়ও বাকি নেই। এসে গেছে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এক ইভেন্ট। নতুন প্রজন্ম গোটাটাই তাকিয়ে আছে এই বিতর্কের দিকে। তারা শুনবে, বিমোহিত হবে, ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে এই কর্মসূচি দেখে।

সুতরাং যুক্তির ঘায়েলে ট্রাম্পকে জর্জরিত করে ফেলতে হবে প্রথম আসরেই। সেটাই হিলারি শিবিরের কৌশল। সুতরাং চেষ্টার কমতি রাখছেন না তারা।
দলের লোকেরা ধর্না দিচ্ছেন মনস্তত্ববিদদের দরজায়ও। ডনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিত্বের একটা স্কেচ করে নিতে চান। যুক্তির আঘাতগুলো যখন হানা হবে তখন তাতে ট্রাম্পের ভাবগতিক কোনদিক থেকে কোন দিকে যাবে, বিশেষ করে বিতর্কের মঞ্চে একজন নারী প্রতিপক্ষের সামনে তিনি কী করবেন তাও জেনে নিতে চান হিলারির উপদেষ্টারা।

এরই মধ্যে রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রাসয়নিক পরীক্ষাও সেরে নিচ্ছেন তারা। ট্রাম্পের সবল-দুর্বল দিকগুলো সাজিয়ে নিচ্ছেন যাতে প্রয়োজন মাফিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়। এছাড়াও তারা খুঁজে দেখছেন সেই সব নেতিবাচক দিক যা আসলে একজন প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থীর ক্ষেত্রে কোনওভাবেই যায় না।

বিতর্ক প্রস্তুতি দলের ব্যাপক গবেষণাকর্মের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন হিলারি ক্লিনটন নিজেও। বিশেষ করে শুক্রবারগুলোতে কয়েক ঘণ্টা করে সময় দিচ্ছেন তিনি।

প্রস্তুতি হিসেবে মক ডিবেট করার জন্য তার সহযোগীরা এমন কাউকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন, যিনি মঞ্চে ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো আচরণ করতে পারবেন। ট্রাম্পের মতোই হিলারিকে আক্রমন করতে পারবেন। এমন একজন পেলে তাকে প্রতিপক্ষে দাঁড় করিয়েই প্রস্তুতি নেবেন হিলারি।
অন্যদিকে ডনাল্ড ট্রাম্পের এ নিয়ে পুরোই গা-ছাড়া ভাব। গেলো দুটি রোববারে তিনি অবশ্য কিছুটা করে সময় কাটিয়েছেন ডিবেট টিমের সঙ্গে। কিন্তু তাও সুনির্দিষ্ট কিছু নয়। স্রেফ চলতি পথে ঘুরে যাওয়া। আর ওদের বললেন, আরে তোমরা প্রিপারেশন নিতে থাকো। সময়মতো দেখা যাবে।

ট্রাম্প অবশ্য প্রস্তুতির নামে এমন খাটাখাটনির পক্ষেও নন। গেলো সপ্তায় একটা সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘প্রস্তুতি তো নেওয়াই যায়, কিন্তু বিতর্কের মঞ্চে তাতে স্ক্রিপ্ট নির্ভর কিংবা মেকি ভাবটাই প্রকট হবে। তখন নিজের বক্তব্যকে আর নিজের মনে হবে না। ’

দুই শিবিরের দুই স্টাইল হলেও ২৬ সেপ্টেম্বরের প্রথম মুখোমুখি লড়াইটা নিয়ে দুই পক্ষই সিরিয়াস, তাতে সন্দেহ নেই।

বিতার্কিত হিসেবে হিলারি আগেই নাম কুঁড়িয়েছেন। টেলিভিশন লাইভে তিনি ট্রাম্পকে সরাসরি ঘায়েল করে দেবেন এমনটাই প্রত্যাশা। তবে এখনই নীতিবাক্য আর পরিকল্পনার তোড়ে নয়, ডনাল্ড ট্রাম্পকে এই দফা ঘায়েল করতে হবে তার নিজের দোষে নিজেকে পেঁচিয়ে। হিলারি এমন কিছু যুক্তি কিংবা বক্তব্য খুঁজছেন যা তুলে ধরলে ট্রাম্প টেলিভিশন মঞ্চেই রেগে-মেগে ভুল করে বসেন। অন্যদিকে ডনাল্ড ট্রাম্প, প্রত্যয়ী বক্তা, তার একটাই চাওয়া দর্শক তাকে একজন সত্যবাদী হিসেবে দেখবে, আর বিশ্বাস করবে। হিলারিকে তিনি ঘায়েল করতে চান তার নীতি-নৈতিকতা ও সততার প্রশ্নে।

উপদেষ্টারা খুব করে বলছেন, একজন ডামি হিলারিকে উল্টোদিকে রেখে অন্তত একটা মক ডিবেটে তিনি যেনো অংশ নেন। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প সে কথায় কান দিচ্ছেন না। গত ২১ আগস্ট নিউ জার্সিতে একবার চেষ্টা করা হচ্ছিলো, কিন্তু ‘এসব হিলারি হিলারি খেলা সম্ভব নয়, বলে তা উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। গত রোববার এক সাক্ষাৎকারে এ ধরনের প্রস্তুতির কোনও মানে হয়না বলেও মত দিয়েছেন ট্রাম্প।
“আমি জানি আমি কে, আর সে কারণেই আজ আমি এখানে,” বলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রাইমারির ১১টি ডিবেট সেশনে তার অব্যাহত জয়ের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘মিথ্যা কথার ডালা সাজানোর কোনও ইচ্ছা আমার নেই। হ্যা, সম্ভব হলে একটা মক ডিবেট আমরাও করবো, তবে আমি আসলে এর কোনও প্রয়োজন দেখিনা। ”

‘হিলারিকে কিভাবে হ্যান্ডল করতে হয় তা আমার জানা আছে,’ এমন একটি ঘোষণাও তিনি দিয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় আসলে নীতি, পরিকল্পনা এসবে বিতর্কের জয় পরাজয় নির্ধারিত হয় এমনটা তিনি মনেই করেন না, বরং তার মনে হয়, মঞ্চে কতটা দৃঢ় থাকা গেলো, কতটা নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়া গেলো তাতেই আসবে জয়। ডনাল্ড ট্রাম্প অনেকটাই নিশ্চিত, এ ব্যাপারে তিনি সিদ্ধহস্ত। বললেন, হিলারি ক্লিনটনতো গতানুগতিক রাজনীতিকদের মতো মুখস্ত করা বুলি আওড়াতেই মঞ্চে আসবে।

অন্যদিকে মিসেস ক্লিনটন শান্তভাবে মঞ্চে উপস্থিত হবেন, হাতে একটা ব্রিফিং বুক নিয়েই। গত শুক্রবার তিনি বসেছিলেন ডিবেট টিমের সদস্যদের সঙ্গে। যাদের মধ্যে ছিলেন দীর্ঘ দিনেনের ডেমোক্রেটিক সংগঠক রন ক্লেইন, ওয়াশিংটনের আইনজীবি ক্যারেন ডুন ও তার সিনিয়র স্ট্রাটেজিস্ট জোয়েল বেনেনসন। বসে তারা ডনাল্ড ট্রাম্পের ওপর সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত, বিতর্কের সম্ভাব্য প্রশ্ন, প্রতিপাদ্য এসব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তবে মিসেস ক্লিনটনের প্রস্তুতির জন্য তার উপদেষ্টারা গবেষণার একটা প্রশস্ত জালই বিস্তার করেছেন। তারা এরই মধ্যে ‘আর্ট অব ডিল’র যৌথ লেখক টনি সোয়ার্টজ’র সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা মনে করছেন সোয়ার্টজ কিংবা অন্য অদৃশ্য লেখকেরাই আসলে বলতে পারবেন ট্রাম্পের ভেতরের খবরগুলো।  

হিলারির উপদেষ্টারাও ট্রাম্পের মতোই মনে করেন, বিতর্কের মঞ্চে আওড়ানো নীতিকথা আসলে কেউই মনে রাখে না। সুতরাং তাদেরও আসলে ট্রাম্পকে ঘায়েলের অন্য পথ খুঁজতে হবে। বিশেষ করে তাকে ক্ষেপিয়ে দিতে পারলে তাতে ফল পাওয়া যাবে।

ক্লিনটন ক্যাম্প বিশ্বাস করে ট্রাম্প তার নিজের বুদ্ধিমত্তা, ব্যবসায়ী ইমেজ আর তার ট্যাকের জোর এই তিন নিয়ে বেশ নাজুক অবস্থায় থাকেন। আর ওই দিকগুলোতেই আঘাত হানবেন হিলারি ক্লিনটন।    

হিলারির উপদেষ্টাদের সঙ্গে ওই সাক্ষাতের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সোয়ার্টজ, তবে তিনি বলেছেন, মঞ্চে হিলারি ক্লিনটন শান্ত থাকতে পারলেই ট্রাম্প বিপাকে পড়ে যাবেন। ট্রাম্পের চরিত্র, উল্টোপাল্টা বক্তব্য, আর কমান্ডার ইন চিফ হওয়ার ব্যাগ্রতা নিয়ে আঘাত এলেই হলো।

ট্রাম্পের মনোযোগিতার সমস্যা প্রকট। একটু জটিল তথ্য হলেই তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়, এ ধরনের বিতর্কে মুখোমুখি হওয়াই তার পক্ষে কঠিন, বলেন মি. সোয়ার্টজ। আসলে প্রস্তুতি হিসেবে তার হুমকি-ধমকি ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসতে পারবেন না ট্রাম্প। তিনি তার সিক্সথ গ্রেড ভাষাজ্ঞানেরই প্রয়োগ ঘটাবেন, একই কথা বারবার বলবেন, অধিকাংশ বাক্যই অসমাপ্ত রাখবেন। আসলে সারগর্ভ কথা তেমন কিছুই থাকবে না  তার বক্তব্যে।

‘তারপরেও মিসেস ক্লিনটকে ভুলে গেলে চলবে না, সব কিছু ঠিকঠাক থাকার পরেও এ বিতর্কে তিনি হেরে যেতে পারেন,’ বলেন সোয়ার্টজ।
হিলারি ক্লিনটনের লোকেরা এখন ডনাল্ড ট্রাম্পের একটা ডামি খুব করে খুঁজে বেড়াচ্ছেন, যাতে তাকে উল্টোদিকে দাঁড় করিয়ে কয়েকটা প্রস্তুতিমূলক মক ডিবেট করিয়ে নিতে পারেন। লং আয়ল্যান্ডের হোফস্ট্রা ইউনিভার্সিটিতে এই মক ডিবেট হওয়ার কথা রয়েছে।
হিলারির নাজুক দিকগুলোতে কড়া দৃষ্টিই রাখছেন তার দলের লোকেরা। বিশেষ করে ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার আর ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দেওয়া ডোনেশনের বিষয় দুটো বেশ নাজুক। ভাবা হচ্ছে, বিতর্কের মঞ্চই হবে এ ব্যাপারে ভোটারদের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য তুলে ধরার মোক্ষম সুযোগ।  

তবে তার জন্য অসস্তির হবে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আক্রমনগুলো মোকাবেলা করা। যা করার জন্য অনেকটা মুখিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প, সত্য-মিথা মিলিয়ে তার কটুকাটব্য করে যাবেন ট্রাম্প, আর সম্ভাব্য প্রতিটি সুযোগেই সে আক্রমন হানবেন হিলারির উদ্দেশ্যে।

বন্ধুরা হিলারিকে বারবার একটা কথাই বলে যাচ্ছেন, যতই ব্যক্তিগত আঘাত আসুক ধৈর্য্য হারানো চলবে না।
ক্লিনটন শিবিরের সবাই জানেন, এমনটাই ঘটতে যাচ্ছে।

তবে ট্রাম্প সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, হিলারিকে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমনই তিনি করবেন না, এমনকি তার স্বামীর বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়েও নয়।

“আমাকে যদি হিলারি আঘাতও করে, তাও নয়, দেখো তোমরা,” বলেন ট্রাম্প।

কিন্তু ট্রাম্পের অভ্যাস সবার জানা। প্রাইমারিতে নিজের দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরই যেভাবে হেনস্ত করেছেন, তাতে তার ওপর কোনও ভরসা নেই।
তথ্যভিত্তিক বক্তব্যে অভ্যস্ত হিলারির জন্য ট্রাম্পের এই আচরনটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একের পর এক মিথ্যা কথন আর নোংরা বক্তব্য যখন আসতে থাকবে তখন ধৈর্য্য ধরে রাখা কঠিন হবে বৈকি।

মক ডিবেট করে এখন ট্রাম্পকে সহ্য করার প্রস্তুতি নেবেন হিলারি ক্লিনটন। এ জন্য কে করবেন ট্রাম্প চরিত্রে অভিনয় সে নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। নামও বেশ কিছু এসেছে যাদের মধ্যে নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যান জো ক্রাউলি রয়েছেন। ক্রাউলি নিউইয়র্কের কুইন্সের, ট্রাম্পও ওই একই এলাকার। ১৯৯২ সালে বিল ক্লিনটনের প্রধান স্ট্রাটেজিস্ট ছিলেন জেমন কারভিল। তার নামও রয়েছে এই তালিকায়। আরেকজন ট্রাম্পের মতোই বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী মার্ক কুবান। ধারনা করা হচ্ছে ট্রাম্পের মতো করেই হিলারিকে উদ্দেশ্য করে আজেবাজে বকতে তারা ভীত থাকবেন না।

কেউ কেউ অবশ্য জন স্টুয়ার্ট কিংবা অ্যালেক বাল্ডউইনের মতো পেশাদার বিনোদনদাতাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন।
এদিকে এসব খবরে ডনাল্ড ট্রাম্পকে খুব কমই বিচলিত দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, হিলারির সঙ্গে এই খেলা খেলতে তার মেয়ে ইভাঙ্কাই যথেষ্ট।

“তাতে তো হিলারিকে বড়ই করা হবে, নয় কি? প্রশ্ন ট্রাম্পের।

বাংলাদেশ সময় ২০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
এমএমকে            

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।